না’গঞ্জে প্রতিশোধ মুখর বিএনপি নেতারা

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট:

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির মূলদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিগত দিনের নির্যাতনের প্রতিশোধ নিচ্ছে এমন অভিযোগ একাধিক নেতার। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন পাগলপারা হয়ে যান। প্রত্যেকটি সেক্টরে তাদের থাবা বিস্তার করেন। এমন কোনো সেক্টর বাদ যায়নি যেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা হাত দেয়নি। আর এভাবে বিগত ১৭ বছর ধরে যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তা গত দুই মাসের মধ্যেই পুষিয়ে নিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। শুধু পুষিয়ে নেননি বিএনপির অনেক নেতা গত দুই মাসেই টাকার কুমির হয়ে গিয়েছেন। যদিও এখনো বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসননি। ভবিষ্যতে আসবে কিনা সেটারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই একেক বিএনপি নেতা বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হয়ে গিয়েছেন। মূল দলের নেতাদের পাশাপাশি অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক বনে গেছেন। এতে করে অনেক বিএনপি নেতাসহ বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী নেতা থেকে শুরু করে কর্মীরা বিতর্কিতও হয়েছেন। তবে এই বিতর্কিত হওয়াকে তাদের গায়ে মাখছেন না। যেন তারা এতদিন ধরে বিএনপিকে আকড়েই ধরেছেন বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হওয়ার জন্য। সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে ছিল বিএনপি। আর এই ক্ষমতার বাইরে থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন পার করেছেন। সেইসাথে আর্থিকভাবেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর্থিক সংকটে অনেক বিএনপির নেতার পরিবার থেকেও চাপ দেয়া হচ্ছিল রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার জন্য। অনেক সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়ি থাকতে পারলেও তাদের সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সময় কাটতো আদালতের এক বারান্দা থেকে আরেক বারান্দা। ফলে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে ব্যবসা বাণিজ্যে লসের মুখে পড়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়। যে সকল বিএনপি নেতা চাকরি করতেন তাদের চাকরি হারা হতে হয়। এমতাবস্থায় অনেক বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পথে বসার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। যে আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি বিএনপি নেতাকর্মীরাও পরোক্ষভাবে অংশহগ্রহণ করেন। ছাত্রসহ বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী প্রাণ হারান। সেইসাথে শেষ গত ৫ আগস্ট দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। তৃণমূল পর্যায়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আড়াল হয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আত্মগোপনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মাঠ পুরো খালি হয়ে যায়। আর এই অবস্থায় সম্মুখভাবে চলে আসেন বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেইসাথে বিএনপিসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সবদিকেই হাত বাড়াতে থাকেন। নারায়ণগঞ্জের বাজার, ঘাট, বাসস্ট্রান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড, বেসরকারি কোম্পানি, গার্মেন্টস ফ্যক্টরি, ফুটপাত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে এমন কোনো অংশ বাদ দেয়নি যেখানে বিএনপি হাত দেয়নি। সেইসাথে এসকল জায়গা থেকে বিএনপিসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিপুল পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করেন। অনেককে জিম্মি করেন আবার অনেকেই নির্দ্বিধায় দিতে বাধ্য হয়। ইচ্ছা করে হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক ব্যবসায়ী থেকে শুরু থেকে সাধারণ মানুষজন তাদের কাছে আটকা রয়ে গেছেন। আর এই টাকা দিয়ে বিএনপিসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক বনে গেছেন। একই সাথে অনেক জায়গায় প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। কোখাও প্রাণহানি না ঘটলেও গুরুতর আহত হয়েছেন। সেইসাথে সাধারণ নিরীহ মানুষের কোনো রকমের স্বস্তি হয়নি। আগে তারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দ্বারা ভুক্তভোগী হয়েছেন এখন তারা বিএনপির দ্বারা ভুক্তভোগীর শিকার হচ্ছেন। এরই মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকৃত বন্ধন পরিবহন দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের ১নং রেলগেইট এলাকার কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় অনেককে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতেও দেখা গেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় ৮ থেকে ১০ নেতাকর্মী আহত হয়। জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির নেতাদের নজরে আসে এই বন্ধন পরিবহন। সেইসাথে বিএনপি সরকারের ক্ষমতাকালীন মালিক মাহবুব উল্লাহ তপনের নেতৃত্বে সিটি বন্ধন পরিবহনের মালিকরা নাম পরিবর্তন করে পুরানো নাম বন্ধন পরিবহনের নামে ফেরার প্রস্তুতি নেন। কিন্ত এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান বিভিন্ন মামলায় কারাবন্দি সাবেক ছাত্রদল নেতা জাকির খানের সমর্থকরা। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। সেইসাথে এই ঘটনার পর এখন পর্যন্ত বন্ধন পরিবহনে যাতায়াতকারী যাত্রীদের আতঙ্ক যেন কাটছে না। তারা এখনও বাসে করে যাতায়াত করতে ভয় পান। পাশাপাশি বাস মালিকরাও রয়েছেন আতঙ্কে। তাদের ব্যবসায় ঘাটতি যাচ্ছে। এর আগে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চল এলাকার পোশাক কারখানার ঝুট দখলে নিতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। গত ২৯ আগস্ট ফতুল্লার শিল্পাঞ্চল বিসিক ১ নম্বর গলিতে রাসেল মাহমুদ ও জাহাঙ্গীর গ্রুপের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিসিকের ঝুট সেক্টর দখলের জন্য বেশ কয়টি গ্রুপ তৎপর হয়ে ওঠে। এরমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাসেল মাহমুদ ও জাহাঙ্গীর গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। কয়েকদিন ধরেই তারা বিসিকে পৃথকভাবে মহড়া দিতে শুরু করেন। তারই অংশ হিসেবে গত ২৯ আগস্ট রাসেল গ্রুপ একটি কারখানায় গিয়ে ঝুট দাবি করলে জাহাঙ্গীর গ্রুপ জানতে পেরে দুপুরে বিসিকে এসে রাসেল গ্রুপকে ধাওয়া করে। তাদের সংঘর্ষের ঘটনায় এসময় মালিক শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিসিকে অবস্থান নিলে কৌশলে জাহাঙ্গীর গ্রুপ পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পর থেকেই গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা যেন নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করতে পারছে না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন যেভাবে তাদেরকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হতো তাদের পতনের পরও সেই আতঙ্ক থেকে মুক্ত হতে পারছেন না গার্মেন্টস মালিক শ্রমিকরা।