নারায়ণগঞ্জে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশিরা সক্রিয়

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট:

নিজেদের ইমেজ রক্ষা করে ভোটের দিকে এগুচ্ছে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশিরা নির্বাচনমুখী অবস্থান নিয়েছেন। যদিও এর মধ্যে স্থানীয় বিএনপিতেও নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি জনগণের দ্বারস্থ হওয়ার চেষ্টাও করছেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি নেতারা। বিভিন্ন আসন এলাকায় এ নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন এবং কেউ কেউ নিজেদের দল ভারি করার জন্য আওয়ামীঘেষা ও জাতীয়পার্টির লোকজন নিয়ে সভা সমাবেশ করার চেষ্টা করছেন। নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনে এককভাবে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এ আসনে ১৭ বছর পর সোনারগাঁয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠে নামলেও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিমের প্রতি আগ্রহী নন স্থানীয় নেতাকর্মী ও সোনারগাঁবাসী। বয়সের ভারে নুজ্ব রেজাউল করিম ঠিকমত হাটাচলা করতে না পারলেও এক শ্রেণির উচ্ছিষ্টভোগী বিএনপির নিস্ক্রিয় নেতারা রেজাউল করিমের কাধে ভর করে রাজনীতির মাঠে ফেরার চেষ্টা করছেন মাত্র, যাতে আজহারুল ইসলাম মান্নানের ছায়াতলে ঠাই পান। উপজেলা বিএনপি ও ‍উপজেলার একটি পৌরসভা, দশটি ইউনিয়ন বিএনপি ইতিমধ্যে মান্নানকেই সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া। বর্তমানে পুরোদমে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন কাজী মনির। প্রতিটি এলাকায় সভা সমাবেশ করছেন তিনি। একই ধারায় এগুচ্ছেন দিপু ভুঁইয়াও। গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রথমে প্রাথমিকভাবে বিএনপির মনোনয়ন পান কাজী মনিরুজ্জামান মনির, চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ড. তৈমূর আলম খন্দকার ও দিপু ভুঁইয়া। তবে চূড়ান্তভাবে কাজী মনিরকে মনোনিত করে বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পান বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহামুদুর রহমান সুমন। চুড়ান্তভাবে আজাদকে মনোনিত করা হয়। গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির এই তিন নেতাই নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। প্রায়শই বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক সভা সমাবেশ করছেন। নতুন করে আলোচনায় আসছেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার। তিনিও নির্বাচনী মাঠে আছেন কার্যক্রমে। নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়ন পান জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। যদিও প্রাথমিকভাবে বিএনপির মনোনয়ন পান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ। কিন্তু জোটগত কারনে কাসেমীকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হয়। সামনের নির্বাচনকে সামনে রেখে অচিরেই নির্বাচনী মাঠে নামতে যাচ্ছেন শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। মাঠে আছেন মামুন মাহামুদও। ইতিমধ্যে নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী। গত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে প্রচারণায় থাকলেও এবার চুপসে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই রাজু। নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনে ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি এসএম আকরাম। ওই নির্বাচনে তার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিকের ৪ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদও। তবে জোটগত কারনে এসএম আকরামকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনিত করা হয়। ওই নির্বাচনে মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান কারাগারে ছিলেন। তবে এবার সামনের নির্বাচনে আবুল কালাম, সাখাওয়াত হোসেন খান ও মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের মাঝে মনোনয়ন লড়াই হতে পারে। অনেকের ধারণা এখানে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুও মনোনয়ন চাইতে পারেন, যদিও তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেননি।