আজ বৃহস্পতিবার | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ | সকাল ৮:০৮

বাংলাদেশকে হিন্দুবিদ্বেষী বানিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার লাভ কী?

ডান্ডিবার্তা | ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
সা¤প্রতিক সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদগুলো দেখলে একটি ধারণাই পরিস্ফুটিত হয়, তা হলো—বাংলাদেশ একটি হিন্দুবিদ্বেষী দেশ। যেভাবে বিষ ছড়ানো হচ্ছে, যে ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, যেভাবে আমাদের অবমাননাকর ভাবমূর্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে তা থেকে এটা পরিষ্কার যে, ভারতীয় জনগণের মনে আমাদের প্রতি ঘৃণা তৈরির জন্যই এসব প্রচেষ্টা। এর ফলে ভারতীয়দের মধ্যে যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে এবং একইসঙ্গে, বাংলাদেশেও যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে, তা দূর করা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। এভাবে প্রতিবেশী দেশকে ঘৃণার পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করে ভারত কী অর্জন করতে চাইছে? এটা উভয় দেশেরই ক্ষতি করছে। এখানে আমাদের ক্ষতি—বাংলাদেশের একটি বিরূপ ভাবমূর্তি তৈরি করা হচ্ছে। আর ভারতের ক্ষতি—এ ঘটনায় আবারও প্রমাণ হচ্ছে যে তারা তাদের সব প্রতিবেশীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় এবং কাউকেই নিজেদের নীতি গ্রহণের সুযোগ দিতে রাজি নয়। এসব নীতি ভারতের বিপক্ষে নয়, বরং আমাদের নিজের তৈরি পথে এগিয়ে চলার স্বতন্ত্র প্রকাশ। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যম ও নেতাদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ ছিল অতি উত্তম প্রতিবেশী। তাদের মতে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল। তাহলে কী এমন ঘটল যে বাংলাদেশ অতি উত্তম প্রতিবেশীর মর্যাদা থেকে অন্যতম নিন্দিত দেশে পরিণত হলো? তাদের চোখে আমাদের পতনের কারণ হচ্ছে ৫ আগস্ট আমাদের সরকার পরিবর্তন। অথচ, এটি কোনো ষড়যন্ত্রমূলক ক্ষমতার পালাবদল ছিল না। কিন্তু ভারত সরকার ও তাদের গণমাধ্যম সেটাই ভাবছে। তারা বিষয়টি মানতেই পারছে না যে এই সরকার পরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষের মতের প্রতিফলন। তারা বিশ্বাস করে যে, এটি পাকিস্তান, চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের কাজ—বাংলাদেশের জনগণের নয়। যে সত্যটি তারা মেনে নিতে পারছে না সেটা হলো, আমাদের আন্দোলন ছিল ‘জনতার ইচ্ছা’র একটি শক্তিশালী প্রকাশ, যা বহু বছর আগে ফিলিপাইনের ফার্দিনান্দ মার্কোসের পতন ঘটানো ‘পিপলস পাওয়ার’ আন্দোলন কিংবা মিশরের হোসনি মুবারককে উৎখাত করা ‘আরব বসন্ত’র চেয়েও শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এই ঘটনা আমাদের প্রতিবেশীর মন ও মননে দাগ কাটতে পারেনি। এ দেশের মানুষ কয়েক সপ্তাহে যা করে দেখিয়েছে তা করতে অন্যদের বছর না হলেও কয়েক মাস লেগেছে। এটাই ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তি। ‘৩৬ জুলাই’য়ে যা কিছু হয়েছে, তা সেই ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতা, এমনকি তারচেয়েও বেশি কিছু। এই আন্দোলন অনেক বেশি উদ্দীপনাপূর্ণ, শক্তিশালী ও সর্বব্যাপী ছিল। কেউ ভাবতে পারেনি যে গণআন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের ছাত্ররা তা করে দেখিয়েছে, যা এই আন্দোলনকে করে তুলেছে অনন্য। গণতান্ত্রিকভাবে নিজেদের সরকার পরিবর্তনের অধিকার যে আমাদের আছে, সেটা ভারত মানতে পারছে না। আমাদের দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়তো প্রচলিত ধারার নির্বাচনের মাধ্যমে হয়নি। বরং এটা ছিল ‘জনতার ইচ্ছা’র বলিষ্ঠ প্রকাশ, যা সাধারণত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজেই নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছিলেন। যার ফলে আন্দোলনই ছিল একমাত্র পথ। মজার বিষয় হলো, তিনি যদি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে পরাজিত হতেন, তাহলে অন্তত দেশে থেকে যেতে পারতেন। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার লজ্জার মুখে তাকে পড়তে হতো না। কাজেই সার্বিকভাবে আমাদের ক্ষমতার পটপরিবর্তন ছিল গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু ভারত প্রথম থেকেই এটা মেনে নেয়নি। উল্টো তারা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত¡’ তৈরি করেছে এবং আজ অবধি তারা সেই তত্ত¡ই আঁকড়ে ধরে আছে। আমরা সবাই জানি, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যান এবং তার সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট ড. ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অন্তর্বতী সরকার গঠনের আগের তিন দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে তৈরি হয় শূন্যতা। এ সময় আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা ও সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মানুষ আক্রান্ত হন। তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে, আক্রান্তদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন এবং তাদের অনেকে পতিত সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী ছিলেন (তার অর্থ এই নয় যে তাদের ওপর হামলা করা ঠিক হয়েছে)। কাজেই এই হামলার ঘটনাগুলো সা¤প্রদায়িক হামলা বলা সম্পূর্ণভাবে উচিত না, যদিও সেটাই করা হচ্ছে। যদি পুলিশ বাহিনী তাদের স্বাভাবিক দায়িত্বে থাকত, তাহলে এমন ঘটনা ঘটত না। যাইহোক, প্রথম কয়েক দিনের সেই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতীয় সরকার ও গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। নতুন নেতাদের পর্যবেক্ষণ ও সঠিক মূল্যায়ন করার পরিবর্তে ভারতীয় গণমাধ্যমে ভুল ব্যাখ্যা ও ভুল প্রতিবেদন প্রকাশের হিড়িক পড়ে যায়। ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘হিন্দু হত্যা’র ন্যারেটিভ সবকিছুকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিল এবং আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হুমকির মুখে, তখন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের সবচেয়ে সংগঠিত সংগঠন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট সময়কালের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ১৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে সা¤প্রদায়িক সহিংসতার দুই হাজার ১০টি ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এসব ঘটনায় নয় জন নিহত, চারজন নারীকে ধর্ষণ, ৬৯টি উপাসনালয়ে হামলা, ৯১৫টি বাড়ি ও ৯৫৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ৩৮টি শারীরিক হামলা ও ২১টি সম্পত্তি দখলের ঘটনাও ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর যেকোনো ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশকে অবশ্যই সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমে যেভাবে বাংলাদেশকে তুলে ধরা হচ্ছে, সেটা কি ন্যায়সঙ্গত? সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা কি ভারতেরও বাস্তবতা নয়? গুজরাটের গোধরায় একটি ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া এবং সেখান থেকে শুরু হওয়া দাঙ্গায় ৭৯০ জন মুসলিম ও ২৫৪ জন হিন্দু নিহত হয়েছিলেন, হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়েছিলেন। এই তথ্য খোদ ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতে ৩১টি দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ২০টি ছিল হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে। ভারতীয় গণমাধ্যম এখন যা করছে, তখন কি বাংলাদেশি গণমাধ্যম তেমন কিছু করেছিল? প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় ঐক্যের আহŸান এবং সব রাজনৈতিক দলকে একত্রিত হয়ে আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার আহŸান স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা এই পরিস্থিতিকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু যুদ্ধংদেহী ভারতীয় গণমাধ্যম সেগুলোকে যেভাবে প্রচার করেছে, তা পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। কিন্তু আমাকে যে বিষয়টি সবচেয়ে হতবাক করেছে তা হলো, তারা প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচারের আগে তথ্যগুলো যাচাই করেনি। অথচ, এগুলো সাংবাদিকতার একেবারে মৌলিক ও প্রাথমিক দায়িত্ব। অনেক সাক্ষাৎকার ও টকশোতে অন্য কোনো অপ্রাসঙ্গিক ঘটনার ফুটেজ দেখিয়ে বাংলাদেশকে সা¤প্রদায়িক দেশ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। স¤প্রতি আরটি ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে শিব মূর্তি ভাঙার একটি ফুটেজ দেখানো হয়। সেখানে দাবি করা হয়, ভিডিওটি বাংলাদেশ থেকে ধারণ করা। প্রকৃতপক্ষে, এটি ভারতের বর্ধমানের সুলতানপুরের একটি মন্দিরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ফুটেজ। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরলেও আরটি ইন্ডিয়া দুঃখপ্রকাশ করা তো দূরে থাক, ভুল প্রতিবেদনটি সংশোধনও করেনি। এ ধরনের ঘটনা কমতে থাকবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গণমাধ্যমের উত্তপ্ত ভাষাও হয়তো কিছুটা ঠাÐা হয়ে আসবে এবং নৈতিক মূল্যবোধের জায়গায় ফিরবে। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমের সৃষ্টি করা এই বিকৃত বর্ণনার মনস্তাত্তি¡ক প্রভাব আমাদের দেশে দীর্ঘমেয়াদে বেদনাদায়ক অনুভূতি রেখে যাবে। অহংকারী ও যেকোনো মূল্যে বাড়তি ক্লিক পাওয়ার মানসিকতার কারণে ভারতীয় গণমাধ্যম হয়তো এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করবে না, কিন্তু পেশাদার ক‚টনীতিকরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন বলে আশা করি।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০৯
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৭:১৫
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:১০
  • ১১:৫৫
  • ১৫:৩৬
  • ১৭:১৫
  • ১৮:৩৪
  • ৬:৩০
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা