আজ বৃহস্পতিবার | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ | সকাল ১১:২৫

রিয়ার বাড়িতে শোকের মাতম এই হত্যার বিচার হবে কি?

ডান্ডিবার্তা | ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
শহরের নয়ামাটি এলাকার বাড়িটি এখন শুনসান নিরবতা। প্রতি বছর এই দিনে এই বাড়িতে উৎসবে পরিনত হতো। গত বছরও জাকজমক ভাবে রিয়া গোপের জন্মদিন পালিত হয়েছে। এবার সেই বাড়িতে শোকের ছায়া। প্রতি বছরের মতো এবারো মেয়ের জন্মদিনে কেক নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন দীপক কুমার। তার একমাত্র মেয়ে রিয়ার জন্য। গতকাল বুধবার ছিল রিয়ার জন্মদিন। সকাল থেকেই বাবার অপেক্ষায় প্রহর গুণতো রিয়া। বাবা দরজায় কড়া নাড়লেই দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিত। তবে এবার আর দরজার কাছে আসেনি কেউ। ডাকেনি বাবা বলে। বাবা দিপক কুমারও এবার বিষন্ন মনে বাসায় বসে আছে। এবার বাবা কেক নিয়ে আসছো বলে বাবাকে বুকেও জড়িয়ে ধরেনি কেউ। কারণ রিয়া নেই। সে আর ফিরবে না কোনদিন। বাবার আনা কেকের ওপর মোম জ্বলছে, কিন্তু ফুঁ দিয়ে নেভানোর মানুষটি আর নেই। রিয়ার ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে কেক সামনে নিয়ে বসেছিলেন তার বাবা মা। আর কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন অঝোরে। গত ১৯ জুলাই বঙ্গবন্ধু সড়কে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে তার বাহিনী এলাপাথারি গুলি ছুড়লে ছাদে থাকা রিয়া গুলি বিদ্ধ হয়। ৫দিন পরে সে না ফেরার দেশে চলে যায়। সেদিন পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ২নং রেল গেইট থেকে মন্ডলপাড়া পর্যন্ত বিবি রোড়ে পুলিশের অবস্থান ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করে, সন্ত্রাসীদের এলোপাথারি গুলি ছুড়া ছাড়া আর কেউ সেদিন ঐ এলাকায় গুলি ছুড়েনি। ঘটনা সম্পর্কে রিয়ার দাদী মিনা গোপ জানান, রিয়া গোপ ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে অকালে ঝরে যাওয়া একটি নাম। মেধাবী শিক্ষার্থী রিয়া নয়ামাটি প্রাইমারি স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ১৯ জুলাই বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। চারিদিকে ছাত্র-জনতা ও পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। রিয়াদের বাড়ির চারিদিকেও গোলাগুলির শব্দ হচ্ছিল। শব্দ শুনে কৌতুহলে রিয়া দৌড়ে বাড়ির ছাদে ওঠে। তার পিছু নেয় রিয়ার বাবা দীপক কুমার। মেয়েকে কোলে নিতেই ভয়ংকর এক শব্দে আঁতকে উঠেন তিনি। কিছু বুঝে উঠার আগেই রক্তে ভিজে যায় তার পুরো শরীর। বুলেট এসে বিদ্ধ হয় রিয়ার মাথায়। মুহূর্তেই ঢলে পড়ে সে বাবার কোলে। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিন দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। ২৪ জুলাই রিয়া গোপ মারা যা। পরে মাসদাইর শ্মশানে রিয়াকে দাহ করা হয়। শহরের নয়ামাটি এলাকার রিয়ার পরিবারের বসবাস। সেখানের দ্বীনবন্ধু মার্কেটের ৪র্থ তলায় তারা থাকেন। সম্প্রতি তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে সুনসান নীরবতা। দরজায় কড়া নাড়লে এক বৃদ্ধা এসে দরজা খুলে দেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরে তিনি বলেন, কথা বলে আর কি হবে? যে চলে গেছে সে তো আর ফিরে আসবে না। ছোট্ট একটা শিশু তার পিছন থেকে উঁকি দেয়। দরজায় নতুন মানুষ দেখে দৌড়ে চলে যায় ভিতরের কক্ষে। শিশুটিকে দেখিয়ে রিয়ার দাদী মিনা গোপ বলেন, রিয়ার চাচাতো বোন স্নিগ্ধা। রিয়ার মৃত্যুর পর নতুন মানুষ দেখলেও ভয় পায়। রিয়ার সমবয়সী চাচাতো বোন স্নিগ্ধা গোপ। দিনের পুরো বেলাই কাটত দুইবোনের একসঙ্গে। রিয়ার রক্তাক্ত মৃত্যু দেখে স্নিগ্ধাও স্তব্ধ হয়ে গেছে। দু’বোনের কোলাহলে যে ঘর মুখরিত হয়ে থাকত, সে ঘরে এখন কেবলই নীরবতা। নতুন কোন মানুষের সামনেই সে আর যায় না। মৃত্যুভয় যেন তাকেও জেঁকে ধরেছে। মিনা গোপ বলেন, ‘নাতিন দুইটা সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করত ঘরে বাইরে। রিয়াটায় বেশি চঞ্চল ছিলো। কিন্তু এখন পুরা ঘরটাই ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমার ঘরেই আমার নিরাপত্তা নাই। বাড়িতে আইসা হামলা হইবো, নাতিন মরব এটা কি মাইনা নেওয়া যায়?’ রিয়ার মায়ের কক্ষে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ঘরের এক কোণে বসে আছেন বিউটি ঘোষ। তাকিয়ে আছেন দেয়ালে ঝুলে থাকা মেয়ের ছবির দিকে। মেয়ের কথা শুনেই নিস্তব্ধতা কাটিয়ে আহাজারিতে কেঁদে উঠেন তিনি। অশ্রুভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাচ্চাটা ভাত খাইতেছিল। আওয়াজ পাইয়া না খাইয়া দৌড়ে ছাদে গেল। বললাম যাইয়ো না মা। বলল, মা আসতাছি। সেই যে গেলো আর বুকে ফিরলো না মাইয়াটা। বিয়ের পর সাড়ে চার বছর চিকিৎসা করে রিয়া হইছিল। আমার একটা মাত্র মাইয়া। অনেক চঞ্চল ছিল, আবার নাচে আবৃত্তি পড়াশোনায় ছিল অনেক ভালো। ক্লাসে প্রথম হইছিল। ওরে নিয়া অনেক স্বপ্ন ছিল আমার। আমার রতন রে এমনে মাইরা ফেলবো এটা তো কোন দিন দুঃস্বপ্নেও ভাবি নাই। এতো কান্দি, চোখের পানি শুকায় না। পড়তেই থাকে।’ তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীও রিয়ার মৃত্যুর পর থেকে আমার মতন কেমন যেন দিশাহীন হয়ে গেছে। আক্ষেপে নিজের শরীরে পিটায়। সে কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। কিন্তু আগের মতো আর কাজও করতে পারে না। আমি রিয়ারে ফিরে পেতে চাই। ওর মতোই একটা সন্তান চাই ঈশ্বরের কাছে। হায়! ঈশ্বর যদি আমার রিয়ারে ফিরায় দিতো।’ মেয়ের রক্তে ভেজা শরীর আজো ঘুমাতে দেয় না দীপক কুমারকে। শোকে শোকে প্রায়পাথর দীপক কুমার বলেন, ‘আমি আমার মেয়ে হারিয়েছি। মেয়ের লাশ কাঁধে নেওয়া যে কত কষ্টের সেটা আমি কিভাবে বলব? আমি মেয়েকে কোলে নিলাম, আর সাথে সাথে মেয়েটার মাথায় আইসা গুলিটা লাগল। ওরে কোলে না নিলে তো আমি মারা যাইতাম। আমার মরণ আমার মেয়ে নিয়া গেল। এই কথা আমি কেমনে ভুলব। আমি জীবিত থাইকাও মৃত। এটা কোন জীবন আমার!’ তিনি আরও বলেন, ‘রিয়া হত্যা নিয়ে আমরা কোনো মামলা করিনি। কে মেরেছে জানি না, কার নামে মামলা করব। মৃত্যুর পর পর কয়েকজন সাহায্য করতে চাইছিল। তখন টাকা নেই নাই। ডিসি অফিস (জেলা প্রশাসকের কার্যালয়) থেকে সাহায্য করবে বলেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন আর্থিক সহায়তা আমরা পাই নাই।’ প্রতিবেশী মামুন এ বিষয়ে বলেন, সেদিনের পর থেকে রিয়ার পরিবারের মানুষকে তেমন একটা বাইরে বের হতে দেখা যায় না। দীপক ভাইও দোকানে আগের মতন যায় না। বাচ্চাটার রক্ত মাখা মুখটার কথা মনে পড়লে আর ভালো লাগে না। ছাত্র-জনতার বিজয়ে দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু পরিবারটি ডুবে আছে শোকের সাগরে। গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন স্তদ্ধ করতে যারা প্রকাশ্যে শত শত রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল সেই গুলি ছুড়ার ভিডিও সারা বিশ^ দেখলেও এ নিয়ে এখনও কোন প্রকার মামলা হয়নি। সেদিনের ঘটনার পর পতিত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা পরির্দশন করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে গিয়ে একজন কাউন্সিলরকে হিরো অব দ্যা সিটি বলে আথ্যায়িত করেন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০৯
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৭:১৫
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:১০
  • ১১:৫৫
  • ১৫:৩৬
  • ১৭:১৫
  • ১৮:৩৪
  • ৬:৩০
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা