আজ রবিবার | ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ | বিকাল ৫:৪১

না’গঞ্জের ৫ শহীদ বুদ্ধিজীবীকে কেউ স্মরণ করেনি

ডান্ডিবার্তা | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৪:৪২ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনো না হলেও প্রাথমিক তালিকায় ৫৬১ জনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের পাঁচজন রয়েছেন। তারা হলেন- ডা. হাসিময় হাজরা, ডা. মোহাম্মদ আবদুল জব্বার, এ এফ জীয়াউর রহমান, ডা. লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ আমিনুল হক ও মতিলাল ঘোষ। কিন্তু কখনো এই বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে হয়নি কোন আয়োজন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে ২০২০ সালে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জাতীয় কমিটির একটি উপ-কমিটি ছিল। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত চার বছরে মন্ত্রণালয় ৫৬১ জন বুদ্ধিজীবীর নাম তালিকাভুক্ত করে চারটি গেজেট প্রকাশ করে।
ডা. হাসিময় হাজরা
ডা. হাসিময় হাজরা ১৯৪৬ সালের ২৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ডা. অনন্ত মাধব হাজরা ছিলেন ঢাকেশ্বরী কটন মিলের চিকিৎসক। পরিবারে বিপ্লবের ঐতিহ্য ছিল; তাঁর চাচা অমৃত লাল হাজরা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার অপরাধে দ্বীপান্তরের শাস্তি ভোগ করেন। হাসিময়ের পরিবার ঢাকায় বাস করলেও ১৯৬৪ সালের সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার পর তাঁর মা ও ভাইবোনেরা ভারতে চলে যান। তবে হাসিময় ও তাঁর বাবা থেকে যান ঢাকায়। হাসিময় হাজরা ১৯৬২ সালে ঢাকেশ্বরী মিল স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৬৪ সালে নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ থেকে আইএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৭০ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি শুধু একজন মেধাবী ছাত্রই ছিলেন না, বরং একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে ফুটবল ও হকিতে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অনেকে তাঁকে পরামর্শ দেন ভারত চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের সবাই কি ওপারে যেতে পারবে?” ঢাকায় থেকে গিয়ে গোপনে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন কাজে জড়িত হন। আহতদের চিকিৎসাসেবা দিতে তিনি সদা তৎপর ছিলেন। ২ মে ১৯৭১ দুপুরে তিনি ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেলের উদ্দেশে রওনা দেন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ। অনেক অনুসন্ধানের পর জানা যায়, পাকিস্তানি সেনারা রহমত বক্সার নামে এক অবাঙালির নেতৃত্বে তাঁকে পিজি হাসপাতালের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং অকথ্য নির্যাতনের পর হত্যা করে। তাঁর মরদেহ টুকরো টুকরো করে অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেওয়া হয়।
শহীদ ডা. মোহাম্মদ আবদুল জব্বার
শহীদ ডা. মোহাম্মদ আবদুল জব্বার ১৯৩০ সালে (১৩৩৬ বঙ্গাব্দ, আনুমানিক) নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার কাশীপুর গ্রামের সরদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আহমেদ আলী সরদার এবং মাতা আঞ্জুমান আরা বেগম। তিনি ছিলেন এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ধর্মপ্রাণ, মানবিক ও সেবামূলক কর্মকাÐে উৎসাহী। ১৯৫০ সালের ৭ মে তিনি হালিমা খাতুনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের আটজন সন্তান রয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন পুত্র এবং পাঁচজন কন্যা। ডা. মোহাম্মদ আবদুল জব্বার তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৬৪ সালে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বেইরুট থেকে পাবলিক হেলথে ডিপ্লোমা লাভ করেন। ডা. জব্বার ১৯৫৮ সালে জামালপুরে মহকুমা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ডা. জব্বার দিনাজপুর সদর হাসপাতালে সহকারী সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। যুদ্ধের প্রথম দিক থেকেই তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধা, ইপিআর সদস্য এবং অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে অগ্রগামী ছিলেন। ১৩ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী দিনাজপুর দখল করলে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় তাঁকে চিকিৎসার নাম করে হাসপাতালে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দিনাজপুর সদর হাসপাতালের পাশের মাটি খুঁড়ে ডা. জব্বারের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। তাঁর মরদেহ দিনাজপুরের চেহেলগাজী মাজার সংলগ্ন গোরস্থানে ধর্মীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
এ এফ জীয়াউর রহমান
এ এফ জীয়াউর রহমান ১৯২৬ সালের ২ ফেব্রæয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার নওগাঁ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোসলেহউদ্দিন ভ‚ঁইয়া ব্রিটিশ আমলে ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। শৈশবেই পিতৃহারা হন তিনি। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের স্কুলে। স্থানীয় স্কুল ও কলেজ থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন ও ইন্টারমিডিয়েট উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৪৯ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে যোগদান করেন। কর্মদক্ষতার কারণে ১৯৬৩ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পান। ১৯৬৮ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষ ও সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সিলেটে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা ১৫ মার্চ থেকে তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখে। তিনি খাদ্যাভাব এবং জীবনহুমকির মধ্যেও অটল থাকেন এবং পাকিস্তানিদের অনুরোধে ইসলামাবাদে কাজ করতে রাজি হননি। ১৪ এপ্রিল সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নিয়ে যায়। তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যান। এরপর তাঁর আর কোনো সন্ধান মেলেনি। পরে জানা যায়, পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে হত্যা করে এবং তাঁর মরদেহ লুকিয়ে ফেলে। জীয়াউর রহমানের স্ত্রী ফেরদৌসী চৌধুরী এবং তাঁদের দুই ছেলে শাদ বিন জীয়া ও খালেদ বিন জীয়া এবং এক মেয়ে শাহরীন রহমান। গ্রামের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা ছিল। কর্মজীবনের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নিজ গ্রামে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ আমিনুল হক ও মতিলাল ঘোষ শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ আমিনুল হক ও মতিলাল ঘোষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। ডা. লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ আমিনুল হক সেনাবাহিনীতে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ শহীদ বুদ্ধিজীবী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ধর্মগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন। তার পিতা মো. আলী মাষ্টার ও মায়ের নাম আছিয়া খাতুন। শহীদ বুদ্ধিজীবী মতিলাল ঘোষের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ঝাউগড়া গ্রামে। তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার পিতা জয় চন্দ্র ঘোষ এবং মাতা মনোনোহিনী ঘোষ।

 




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:১৪
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৭:১৯
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:১১
  • ১১:৫৯
  • ১৫:৪০
  • ১৭:১৯
  • ১৮:৩৮
  • ৬:৩৬
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা