আজ রবিবার | ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ | বিকাল ৪:১০

জামদানির কারিগররা পেশা বলাচ্ছেন

ডান্ডিবার্তা | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১১:০১ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
জামদানি আমাদের গর্ব, আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের অংশ। একটা সময় ধনী পরিবারের নারীরাই জামদানি শাড়ি পরলেও এখন এর চাহিদা মধ্যবিত্তসহ সাধারণ শ্রেণিতেও রয়েছে। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর জামদানিকে বাংলাদেশের ভৌগলিক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় তাঁতীদের নিপুণ হাতে তৈরি জামদানি শাড়ির সুনাম দেশজুড়ে। এই শাড়ি দেশের গÐি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। তবে দক্ষ জনবল, পুঁজির অভাব, ভারতীয় শাড়ি ভিড়ে গত কয়েক বছরে কমেছে জামদানির কদর। তাই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগর ও তাঁতীরা এখন ভালো নেই। কোনোরকমে জামদানি শিল্প টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় আছেন অনেকে। ২০২১ সাল পর্যন্ত করোনা মহামারিসহ নানা দুযোর্গের কারণে এখানে জামদারি বিক্রি কম হলেও ২০২২ সালে তার পরিবর্তন ঘটে। সে বছর জামদানি কারিগর ও তাঁত মালিকরা ঘুরে দাঁড়ায়। ঢাকাসহ সারাদেশের পাইকারদের আগমনে বেচা-বিক্রি হয় কয়েকগুন। তবে চলতি বছরে এসে তা থমকে পড়ে। এর সঙ্গে আবার দক্ষ জনবল, পুঁজির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে বহু তাঁতখানা। এছাড়া ভারতীয় শাড়ির বাজারজাতের কারণে জামদানি বাজারও উঠা-নামা করে থাকে। একদিকে দাম কমে যাওয়া অন্যদিকে নতুন করে এই পেশায় জড়িত না হওয়ায় কমছে জামদানি তৈরি কারিগরসহ বিক্রয় কেন্দ্র কমেছে সোনারগাঁয়ের বহু গ্রামে। উপজেলার তাতপল্লী গুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগের তুলনায় নেই কর্মচাঞ্চল্যতা। তার মধ্যে চৌরাপাড়া, মুছারচর, বাইশটেকি আলমদীচরভুলা, মালিপাড়া, সাদিপুর, ব্রাহ্মণবাওগাঁ, খেজুরতলা, কাজিপাড়া, শেকেরহাট, বাসাবো, তিলাব, বস্তল, কলতাপাড়া, কাহেনা, গণকবাড়ি, ওটমা, রাউৎগাঁও, নয়াপুর, উত্তর কাজিপাড়া, চেঙ্গাইন, খালপাড় চেঙ্গাইন, ভারগাঁও, কান্দাপাড়া, ফিরিপাড়া, আদমপুরসহ অনন্ত ৩১টি গ্রামে থাকা জামদানি তাতগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। সাদিপুর ইউনিয়নের বাইশটেক গ্রামের জামদানি কারিগর শামীম মিয়া বলেন, কাজ নেই- লোকজন কাজে আসতে চায় না- ভারতীয় শাড়ি নকল জামদানি বেশি ছড়িয়ে পড়ে। তাই ন্যায দামে বিক্রি হয় না। তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত আছি। আমরা যারা এই শাড়ি তৈরি করি কেউই সঠিক মজুরি পাই না। তবে আমাদের কাছ থেকে কিনে যারা বিক্রি করছেন তারা ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। ১২শ’ টাকার একটি শাড়ি তৈরি করতে আমাদের এক সপ্তাহ লেগে যায়। এই দামের শাড়ি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ চারটা তৈরি করা সম্ভব হয়। আর ২০ হাজার টাকার শাড়ি তৈরি করতে গেলে ৩ সপ্তাহ চলে যায়। বর্তমানে সঠিক মজুরি না পাওয়ায় অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন এ পেশা। জীবিকার তাগিদে ছোটবেলা থেকে আমি এই কাজ করে আসছি। বর্তমানে যারা এই পেশার সঙ্গে জড়িত তারা প্রত্যেকেই দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করে আসছেন। তাদের অন্য কোনো কাজের অভিজ্ঞতা নেই। এই শিল্পের খারাপ সময় যাওয়া সত্তে¡ও অনেকেই মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় এই পেশা ছাড়তে পাচ্ছে না। জামদানি হাউজের কারিগর আব্দুল বারেক বলেন, ৩৫ বছর ধরে এই কাজ করছি। মামা, খালাদের দেখে এই পেশায় এসেছি। বর্তমানে এখানে ১০ জন কারিগর আছেন। যারা সবাই দীর্ঘদিন ধরে এ কাজের সঙ্গে জড়িত। আগে তাদের যে পারিশ্রমিক দেওয়া হতো তা দিয়ে সংসার চললেও এখন তা দিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেশিরভাগ কারিগররা আগের প্রজন্ম থেকে এই কাজ শিখলেও এখনকার প্রজন্মের কেউই এই কাজ শিখতে আগ্রহী নয়। মালিপাড়া এলাকার একটি জামদানি কারখানার মালিক শুক্কুর আলী বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এমন এক সময় আসবে যখন এই শাড়ির অনেক দাম থাকবে কিন্তু শাড়ি তৈরি জন্য তাঁতি পাওয়া যাবে না। তখন হয়তো জামদানি শাড়ি তৈরির যন্ত্রপাতিগুলো জাদুঘরে পড়ে থাকবে। কেউ এখন এটাকে পেশা হিসেবে নিতে চান না। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে জামদানি পল্লীর তুষার জামদানি হাউজের মালিক মো: তামীম আহমেদ দ্বীপ্ত জানান, ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭০ হাজার পর্যন্ত জামদানি শাড়ি পাওয়া যায়। বর্তমানে অনলাইন আসার পর থেকে আমাদের এখানে ক্রেতাদের চাহিদা অনেক কমে গেছে। আজ থেকে ৫ বছর আগেও জামদানির চাহিদা অনেক ভালো ছিলো, এখন তাঁতশিল্প জামদানি শাড়ি প্রায় বিলুপ্তির পথে। সোনারগাঁ জামদানি তাঁতি সমিতির সভাপতি মো. সালাউদ্দিন বলেন, দক্ষ কারিগরের অভাবে জামদানি শিল্প এখন হুমকির মুখে। বর্তমানে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তবে, এখনো জামদানি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। দক্ষ কারিগর, পুঁজি ও পাইকারদের দৌরাত্ম কমাতে পারলে জামদানি শিল্প আরও এগিয়ে যাবে। তবে বিগত সময়ের তুলনায় জামদানির চাহিদা কমেছে কয়েক গুণ। এই শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের জামদানি পল্লী দেখভাল করে, প্রতিষ্ঠানের উপ-পরিচালক এ কে এম আজাদ সরকার জানান, সোনারগাঁয়ের বিখ্যাত জামদানি শিল্প এখন ঝুঁকির মধ্যে আছে। জামদানি শিল্পের মূল সমস্যা হচ্ছে কারিগর সংকট। এই পেশায় সারাদিন কাজ করে সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পাওয়া যায় আর অন্য পেশায় কাজ করলে আরও বেশি টাকা পাওয়া যায়। জামদানি শিল্প বিলুপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ এটি। মহাজনরা এই ব্যবসা করে ঠিকই লাভবান হচ্ছেন কিন্তু কারিগররা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, এই শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখতে ও আগামী প্রজন্মকে এই পেশায় উৎসাহিত করার জন্য আমরা সোনারগাঁয়ে একটি বিপণন কেন্দ্র চালু করেছি। এছাড়া এখানে একটি কারুপল্লী রয়েছে যেখানে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সোনারগাঁয়ের বিখ্যাত মসলিন কাপড়ের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে জামদানি শিল্পটা টিকে আছে। আমরা এই শিল্পটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
নামাজের সময়
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:১৪
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৭:১৯
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:১১
  • ১১:৫৯
  • ১৫:৪০
  • ১৭:১৯
  • ১৮:৩৮
  • ৬:৩৬
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা