আজ বুধবার | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ১ মাঘ ১৪৩১ | ১৪ রজব ১৪৪৬ | বিকাল ৪:৩০

এখনো বন্ধ হয়নি তোষননীতি!

ডান্ডিবার্তা | ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ

হাবিবুর রহমান বাদল
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে আসত। নারায়ণগঞ্জে বাস্তব অর্থে যে কজন পেশাদার সাংবাদিক সত্য কথা বলতে চেষ্টা করেছে তাদের উপর হামলা মামলা চালানো হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা থেকে শুরু করে মানহানীর মামলা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। শাসকগোষ্ঠির নেতারা নিজেদের পোষা চেলাচামুন্ডা দিয়েও বিভিন্ন ভাবে সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে হেনস্থা করেছে। বিগত পতিত সরকারের সময়ে যারা বিভিন্ন ভাবে এইসব আওয়ামী শাসকগোষ্ঠির লেজুরবিত্তি করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে এখন তাদের অনেকেই ভোল পাল্টে আওয়ামী বিরোধী হিসাবে নিে দের জাহির করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। শামীম ওসমানের প্রত্যাশা নামক মাদক বিরোধী সংগঠনের অনুষ্ঠানে যাদেরকে হুঙ্কার দিতে সাধারণ মানুষ দেখেছে এখন তারাই আমার নারায়ণগঞ্জ অনুষ্ঠানে পাল্টা হুঙ্কার দিতে দেখছে। এরা দলবাজি আর পল্টিবাজ হিসাবে সাধারণ মানুষের কাছে চিহিৃত হলেও নিজেরা এখন জাতীয়তাবাদের পতাকাবাহী হিসাবে নিজেদের জাহির করে চলেছে। গত বছরের পহেলা আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের চরম পর্যায়ে বলেছিলান “দলবাজি সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি”। বাস্তবে এদের পেশাগত দায়বদ্ধতা না থাকায় সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রং বদলিয়ে নিজেদের অবস্থান ঠিক রেখে চলেছে। আমার নারায়ণগঞ্জ নামের নতুন সংগঠনটি গত শনিবার নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে যে গোল টেবিলের আয়োজন করে সেখানে কারো কারো বক্তব্য নিয়ে শহরময় চলছে আলোচনা সমালোচনা। এরাই একসময় কখনো আইভী পন্থি আবার কখনো শামীম ওসনমান পন্থি হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করতেন। এরাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী কাউকে কাউকে দুবৃত্ত বানানোর অপচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তাই সেদিন বলেছিলাম, দেশের সর্বত্র প্রতিটি সেক্টরে যেমন বিভাজন তেমনই আমাদের গণমাধ্যমে বিভাজনটা চোখে পড়ার মত। এখানে পেশাজীবীদের চাইতে ভ’ইফোঁড় নামধারী এবং কার্ডধারী সাংবাদিকদের দাপটটাই যেন বেশী। গলাবাজি যে বেশী করছে, তার চেয়ারটাই সবচেয়ে বড়। এক কথায় দলবাজ সাংবাদিকদের কাছে পেশাজীবী সাংবাদিকরা এখন অনেকটাই অসহায়। অনেকের কাছে সাংবাদিকতা এখন একটি উপলক্ষমাত্র। বিত্তবৈভব, ক্ষমতা ধরে রাখার বিশেষ কৌশল। সমকালীন সাংবাদিকতার ক্ষয়-ক্ষরণ কারও অদেখা বা অজানা নয়? সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রশ্ন করার সক্ষমতা ও সাহস। ক্ষমতার কাছাকাছি গেলেই একশ্রেণির সাংবাদিকের মধ্যে বিগলিত ভাব চলে আসে। সাফাই গান। অথবা এমন প্রশ্ন করেন, যার ভেতর প্রত্যাশিত উত্তর থাকে না। সাংবাদিকতার ধারণা যথেষ্ট পোক্ত না হলে ক্ষমতার তাপ সাংবাদিকদের আক্রমন করবেই। ক্ষমতাবানেরা যে ফাঁদ পেতেছেন, সাংবাদিকেরা তাতে ধরা দিচ্ছেন। সাংবাদিকতা এক নতুন ছদ্মাবরণ ধারণ করছে। পদ-পদবি, সমিতি সবকিছু সাংবাদিকতার আদলে, কিন্তু এর মাধ্যমে রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে। এ নকল আবহ আপাতদৃষ্টে বৈধ বলে মনে হয়। কারণ, এর সঙ্গে যুক্ত আছেন সাংবাদিক, সম্পাদক! এসব পরিচয় কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, মুখগুলোও অচেনা নয়। এরা মূলত শাসকশ্রেণির বয়ানের ব্যাপারী। নিজেদের বিশেষ অনুসন্ধান নেই, নেই বিশ্লেষণ। এ কারণে ক্ষমতাঘনিষ্ঠ সাংবাদিকতা হয়ে উঠছে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বৈধকরণের এক বিশেষ উপায়। মূলধারার সংবাদমাধ্যম, যারা মানসম্পন্ন সাংবাদিকতার চেষ্টা করছে, এই চক্র তাদের বিরুদ্ধে কারণে-অকারণে উঠেপড়ে লাগছে। সাংবাদিকদের মধ্যে গোষ্ঠীপ্রিয়তার নতুন বিন্যাস দেখা যাচ্ছে। এমবেডেড (অবরুদ্ধ) সাংবাদিকতা কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে হয় না, জনতুষ্টিবাদী শাসনের ছায়ার নিচেও এমন সাংবাদিকতা হয়। একটি রাষ্ট্র, যেখানে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়নি, ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির চর্চা সীমিত, সেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হবেই। এটি অস্বাভাবিক নয়। তবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কোনো অলীক ধারণা নয়। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কারও দয়ার ওপর নির্ভর করে না। সাংবাদিকতা মানুষকেন্দ্রিক একটি পেশা। যত দিন মানুষ আছে, তত দিন এ পেশার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব হলো পেশাটি পরিচ্ছন্ন রাখা, পরিশীলিত রাখা। স্বকীয় ধারায় এগিয়ে নেওয়া। ক্ষমতাকাঠামোর সঙ্গে লেজুড়বৃত্তি বন্ধ করা। তাই পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ দয়া করে যারা পদ পদবী কিংবা অর্থের দাপটে সম্পাদক হয়ে সমাজে সাংবাদিক পরিচয়ে তোষামোদি, দলবাজি আর ব্যক্তি পূজা আগের মতই অব্যাহত রেখেছে তাদের বর্জন করুন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না এই নিকট অতীতে যারা দলবাজি আর ব্যক্তিতোষন করে নিজেদের আখের গুছানো তথা ব্যাংক একাউন্ট ভারি করেছে তাদের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। জাতীয় পর্যায়ে অনেকেই চিহিৃত হয়েছে আবার কারো কারো নাম আসামীর তালিকায় স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানেই এসব দলবাজ আর তোষনবাজ কথিত সাংবাদিকদের মধ্যে যারা জুলাই বিপ্লবের পর রাতারাতি ভোল পাল্টে সেই পুরনো কায়দায় তোষননীতি অব্যাহত রেখেছেন তাদেরকে নিজেদের স্বার্থেই বর্জন করুন। এই নতুন বাংলাদেশে পেশাদার সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব সাধারণ মানুষের সামনে ফুটে উঠুক এমন প্রত্যাশাই সাধারণ মানুষের।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা