আজ মঙ্গলবার | ২১ জানুয়ারি ২০২৫ | ৭ মাঘ ১৪৩১ | ২০ রজব ১৪৪৬ | বিকাল ৪:২০

এটাই বাংলাদেশ যেখানে মুসলমানরা মন্দির পাহাড়া দেয়

ডান্ডিবার্তা | ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, গত ৫ আগস্টের পর অন্যরকম পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেছে দেশ। ১৫-২০ দিন কোথাও পুলিশের অ্যাক্টিভিটিস দেখা যায়নি। কিন্তু ওই সময় মুসলমানরা হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছেন। আমরা নিজেরা নিজেদের মহল্লা পাহারা দিয়েছি। এটাই বাংলাদেশ, এটাই বাংলাদেশের স্পিরিট। গতকাল শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ময়ূরপঙ্খী লোকজ মঞ্চে মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ফারুকী বলেন, আমরা প্রত্যেকের পাশে দাঁড়াবো। এতে কার ধর্মীয় পরিচয় কি, কার অন্য পরিচয় কি তাকাবো না। এটা সরকারেরও দার্শনিক। সব ধর্ম, বর্ণ যার যা পরিচয় এই পরিচয়ের ভিত্তিতে কেউ কাউকে আলাদা করবো না। সবার পাশে থাকবো। তবে, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে এটা অস্বীকার করছি না। সেসব বিষয় সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বৈচিত্র্যের জায়গা, বৈচিত্র্য রক্ষার্থে সরকার কাজ করবে। এজন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যে কোনো জাতির জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াই দক্ষতা। সামনে এগিয়ে যেতে গেলে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে যে, পেছনে কোন রাস্তা ফেলে এসেছি, কোন রাস্তা দিয়ে হেটে এসেছে জাতি এটা নজরে রাখে। এর দিকে নজর রাখার কাজ লোকজ ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের। এ মেলায় আমাদের খেয়াল রাখার জন্য, এটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা কোন জায়গা থেকে ফিরে এসেছি। জাদুঘর এলাকা উন্নয়ন প্রশ্নে ফারুকী বলেন, আমরা তো এখানে মাত্র এসেছি, এসেই প্রথমে যে উপলব্ধিটা করেছি। এখানে আসার মূল বাধা হচ্ছে প্রবেশ সড়ক সরু। ফলে মানুষের সমস্যা হয়। এটা আমরা চাইলে আজকেই সমাধান করতে পারবো না। কিন্তু এই সমস্যাটা চিহ্নিত করেছি। আমরা কাজ করতে চাই। এখানকার রাস্তা প্রশস্ত করতে চাই। তিনি আরও বলেন, যেকোনো বড় রাজনৈতিক ঘটনা একটি সাংস্কৃতিক ঘটনার বহিঃপ্রকাশ। জুলাই এর ঘটনা একদিন দুইদিনের ঘটনা নয় মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ দিয়ে এই জাতিকে দুই ভাগ করা হয়েছে। আমাদের ধর্ম আমাদের সংস্কৃতির অংশ না, এটা বলে ধর্মকে সংস্কৃতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি সাংস্কৃতিক বিরোধ মেটাতে না পারি তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিরোধ মিটবে না। উপদেষ্টা বলেন, অনেক টাকা ব্যয় করে নগরীতে সংস্কার করলে যদি দর্শনার্থী না আসে তাহলে সংস্কারের কোন মূল্য থাকবে না। ৫০-৬০ বছর পরে আবারো এগুলো ধ্বংসের মুখে পড়বে। সোনারগাঁকে পর্যটন নগরী করা সম্ভব ঢাকা থেকে দর্শনারথীরা পরিবার নিয়ে দর্শনীয় স্থান দেখার পাশাপাশি রাত্রি যাপন করতে পারে এবং বিভিন্ন কালচারাল অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণ করতে পারে। সোনারগাঁ বাংলাদেশের মধ্যে বড় ট্যুরিজমের জায়গা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, সামনে এগিয়ে যাওয়া যে কোনো জাতির লক্ষ্য। কিন্তু সামনে এগিয়ে যেতে গেলে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পেছনে কোন রাস্তাটা ফেলে এসেছে বা কোন রাস্তা দিয়ে হেঁটে এসেছে এ জাতি, সেদিকে নজর রাখা। এ দিকে নজর রাখার কাজই হচ্ছে লোক ও কারুশিল্প মেলার কাজ। আমরা কোথা থেকে এসেছি এবং আমাদের জার্নিটা কেমন ছিল সেই দিকে খেয়াল রাখা। প্রতিবছরের মতো এবারও বড় আকারে আয়োজন হয়েছে জানিয়ে ফারুকী বলেন, এখানে আসার বড় বাধা হচ্ছে, এখানের অ্যাপ্রোচ রোডটা খুব সরু। এটা আজকেই সমাধান করতে না পারলেও এই বিষয়টি আমরা অ্যাড্রেস করবো। যাতায়াত ব্যবস্থা যাতে আরও উন্নত হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব হেলালউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক এ কে এম আজাদ সরকার। উৎসবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারুশিল্পী মিলঞ্চি সিং, চিত্রিত হাতি ঘোড়া কারুশিল্পী ধীরেন্দ্র সূত্র ধর, টেপা পুতুল কারুশিল্পী সুনীল পালকে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরষ্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়। প্রত্যেককে একভরি ওজনের পদক ও এক লাখ টাকা প্রদান করা হয়। দুজনকে শিল্পাচারয জয়নুল আবেদীন আজীবন সম্মাননা ২০২৪ দেয়া হয়। নকশিকাঁথা শিল্পের জন্য বেগম হোসনে আরা ও তামাকাসা শিল্পের জন্য মানিক সরকার এ পুরস্কার পেয়েছেন। দুজনের প্রত্যেকে তিন লাখ টাকা ও দেড় ভরি ওজনের পদক দেওয়া হয়। আবহমান বাংলার বিলুপ্ত প্রায় লোক ঐতিহ্য ও লোক সংস্কৃতির সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবনের লক্ষে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের এ উৎসবের আয়োজন করেছে। এবারের উৎসবে কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনীর ৩২টিসহ মোট ১০০টি স্টল স্থান পেয়েছে। সারাদেশের প্রথিতযশা ৬৪ জন কারুশিল্পী কর্মরত প্রদর্শনীতে এবার অংশ নিয়েছেন।  এ ছাড়া উৎসবে রয়েছে লোকজীবন প্রদর্শনী, ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ, গ্রামীণ খেলা, বায়োস্কোপ প্রদর্শনী, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের কারুশিল্পীদের তৈরি লোকজ পণ্য এবং উদ্যোক্তাদের কারুপণ্য প্রদর্শন ও বিপননের ব্যবস্থা। প্রতিদিন লোকজ মঞ্চে পরিবেশিত হবে বাউলগান, পালাগান, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি গান, জারি-সারিগান, হাছন রাজারগান, শাহ আব্দুল করিমের গান, লালন সংগীত, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকজ নৃত্যনাট্য, গ্রামীণ খেলা, লাঠিখেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, চর্যাগান ও লোকগল্প বলা। প্রতি শুক্রবার ও শনিবার বিকাল ৩টা থেকে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে লোকজীবন প্রদর্শন ও কানামাছি ও বউচিসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা প্রদর্শন করা হবে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে থানা ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা দায়িত্বে রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত উৎসব খোলা থাকবে। উৎসবে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৫০টাকা।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা