হিলাল আহমেদ
ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ স¤প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ঐতিহ্য বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন, যা চিন্তার উদ্রেক করে বৈকি। উত্তর প্রদেশের সম্ভলের শাহি জামা মসজিদ ঘিরে যে রাজনৈতিক বিরোধ চলছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করা কোনো মন্দ কাজ নয়। ‘সম্ভলে সনাতনী অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। বিতর্কিত কাঠামোকে মসজিদ বলা উচিত নয়। মুসলিম লিগের মানসিকতা দিয়ে ভারত পরিচালিত হবে না।’ যোগীর এমন মন্তব্য অবশ্য বিস্ময়কর নয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। মন্দির-মসজিদ বিরোধকে ঘিরে একটি নতুন রাজনৈতিক ফায়দা তৈরি করে তা থেকে সুবিধা লোটার জন্য সনাতন ধর্মকে অধিকতর উগ্র ও বিস্তৃতভাবে সামনে আনার প্রয়াসটা স্পষ্ট। তবে যোগীর মন্তব্যে কিছু নতুন বিষয় এসেছে। তিনি আসলে ভারতীয়, হিন্দু বা সনাতনী ঐতিহ্যের নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চাইছেন। আর তা উৎসারিত হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উদীয়মান এক ধারা থেকে, যা ২০১৯ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি মামলার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকে সেভাবে নজরে আসেনি। আদিত্যনাথের এই নতুন ব্যাখ্যা মোটাদাগে চারটি বৈশিষ্ট্যে বিন্যস্ত। প্রথমটি হলো নামকরণ বা পুনর্নামকরণ। একটি বিতর্কিত বা বিরোধপূর্ণ কাঠামোকে মসজিদ হিসেবে অভিহিত না করার দাবিটি আমাদের বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি বিতর্কের দ্বিতীয় পর্যায়টিকে মনে করিয়ে দেয়। ১৯৮৯ সালে শিলান্যাসের পর হিন্দুত্ববাদী দলগুলো বাবরি মসজিদকে বাবরি কাঠামো বা বিরোধপূর্ণ কাঠামো (কখনো বিতর্কিত আরব কাঠামো) হিসেবে অভিহিত করা শুরু করে। লাল কৃষ্ণ আদভানিসহ ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শীর্ষ নেতারা এটা পরিষ্কার করে দেন যে যেহেতু অযোধ্যার ধ্বংস করে দেওয়া একটি মন্দিরের স্থানের ওপর সব সময়ই একটি কাঠামো ছিল, সেহেতু ওটাকে মসজিদ বলে অভিহিত করা যায় না। আদিত্যনাথ একই যুক্তির আশ্রয় নিলেও এর পরিধিকে অনেক বাড়িয়েছেন। তাই শুধু সম্ভল মসজিদের ওপরই দৃষ্টি সীমাবদ্ধ না রেখে মন্দির-মসজিদ বিরোধকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন ক্রমান্বয়ে যেকোনো অহিন্দু উপসানালয়কে বিতর্কিত করে তোলা যায়। বিরোধপূর্ণ কাঠামো অভিধাটির মাধ্যমে যেকোনো ঐতিহাসিক স্থাপনা বা স্থাপত্যকর্ম বিশেষত ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানগুলোকে ভারতের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ হয়ে থাকার প্রতিষ্ঠিত পথটিকে অস্থিতিশীল করে তোলার প্রয়াসেই চর্চিত হচ্ছে। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো স্থান বনাম কাঠামোর বিষয়টি সামনে আনা। এটিও বাবরি মসজিদ-রামমন্দির বিরোধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। যে জমিতে একদা মসজিদ ছিল, সে জমি কালক্রমে তাৎপর্যবাহী হয়ে ওঠে। তিনটি প্রধান বিরোধী পক্ষই জমি নিয়ে আইনি লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিল, যেখানে কাঠামোর আর তেমন কোনো গুরুত্ব ছিল না। অথচ ১৯৯২ সালে করসেবকেরা এ কাঠামোই অবৈধভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ২০১৯ সালে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করা হয়। রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়, বাবরি মসজিদের কাঠামোটির একটি নিজস্ব গুরুত্ব ছিল। সে কারণেই মসজিদটি ধ্বংস করাকে একটি অপরাধমূলক কাজ হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং মুসলমানদের জন্য পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করা হয় নতুন মসজিদ নির্মাণের জন্য। তবে স্থান ও কাঠামোর মধ্যকার আইনি পার্থক্য নতুন ধরনের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পথ খুলে দেয়। ইদানীং ঐতিহাসিক মসজিদগুলো ঘিরে যে বিরোধ-বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা শুধু এই অভিযোগে নয় যে মুসলিম শাসকেরা পবিত্র মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করেছেন। বরং এ জন্য যে পুণ্যস্থানে বা পবিত্র জমিতে এসব মসজিদ নির্মিত হয়েছে হিন্দুত্বকে হেয় করার জন্য। আদিত্যনাথ এই ভূমিকেন্দ্রিক জল্পনার ওপর দাঁড়িয়ে যুক্তি দিচ্ছেন যে সনাতনীদের নির্মিত যেকোনো ঐতিহ্য (কাঠামো, স্থাপত্য বা ভবন) অনিবার্যভাবে হিন্দু বিশ্বাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর তাই মসজিদের কাঠামো অগ্রহণযোগ্য বা বহিরাগত বিষয়। তৃতীয় বৈশিষ্ট্যটি হলো হিন্দু ঐতিহ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এটিও সেই অযোধ্যা বিরোধ থেকে উৎসারিত। আদিত্যনাথের দাবি, হিন্দু ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করা একটি ন্যায্য দাবি, যা অযোধ্যা মামলার রায়ে স্বীকৃত হয়েছে। তিনি এ ক্ষেত্রে প্রচলিত হিন্দুত্ববাদী দাবিকে খানিকটা সংশোধন ও পরিবর্তন করেছেন। প্রচলিত দাবি হলো অযোধ্যার বাবরি মসজিদ, বেনারসের জ্ঞানবাপি মসজিদ ও মথুরার শাহি ঈদগাহর জমিগুলো অবশ্যই হিন্দুদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তা পুরোপুরি ধর্মীয় কারণে। আদিত্যনাথ এ ক্ষেত্রে হিন্দু ঐতিহ্যের বৃহত্তর ধারণাকে সামনে নিয়ে এসে পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিকে রাজনৈতিকভাবে টেকসই ও বাস্তবে চলমান প্রক্রিয়ায় রূপ দিতে চান। সক্রিয় উপাসনার স্থানগুলোকে যদি হিন্দু-মুসলিম আইনি বিরোধে রূপান্তর করা যায়, তাহলে একটি অবিরত প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করা সম্ভব হবে। সম্ভলের শাহি জামা মসজিদ তারই একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এটা তো একটি সক্রিয় উপাসনার স্থান, যেখানে মুসলমানরা কয়েক শতাব্দী ধরে নিয়মিত নামাজ আদায় করে আসছেন। আবার মসজিদটি ভারতের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া দ্বারা স্বীকৃত ও সুরক্ষিত। এখন একে বিরোধপূর্ণ স্থান হিসেবে দাঁড় করাতে পারলে শুধু আদালতেই মামলা চালানো সম্ভব হবে না, বরং এই শহরে অধিবাসী ও প্রতিবেশী হিসেবে পাশাপাশি বসবাসকারীদের সামাজিক জীবনকেও প্রভাবিত করবে। চতুর্থ বা শেষ বৈশিষ্ট্যটি হলো মন্দির-মসজিদ বিরোধের অভিনব নিষ্পত্তি। আদিত্যনাথ ‘মুসলিম সমাজের’ প্রতি আহŸান জানিয়ে বলেছেন, তাদের উচিত বিতর্কিত সব মসজিদ ও মাজার-দরগাহকে ‘হিন্দু সমাজের’ কাছে ফিরিয়ে দিয়ে দেশে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি স্থাপনে সহায়তা করা। এটি অবশ্য নতুন কোনো দাবি নয়। অতীতে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তির যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে হিন্দু ও মুসলমানদের উচিত একত্রে বসে বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করা। তবে এই সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি প্রয়াসের কল্পনায় দুটি বড় সমস্যা আছে। প্রথমত, অভিন্ন বা একীভূত হিন্দু-মুসলিম সমাজের ধারণা ভীষণ জটিল ও প্রবল সমস্যাযুক্ত। ভারতীয় স¤প্রদায়গুলো খুবই বৈচিত্র্যময়। তাই তাদের নিবিড়ভাবে বিভক্ত, প্রতিযোগিতাময় ও রাজনৈতিক সুবিধাভোগীতে পরিণত করা অসম্ভব। ফলে প্রতিনিধিত্বশীলতার ধারণাও জটিলতর হয়ে যায়, কে বা কারা হিন্দু বা মুসলমানদের অনুভূতির প্রতিনিধিত্ব করবে—এসব সমঝোতায়? দ্বিতীয়ত ও সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ইসলামের ধর্মীয় উপসানার স্থান হিসেবে সক্রিয় মসজিদগুলোর আইনি বৈধতা নিয়ে নতুনভাবে বিতর্ককে সা¤প্রদায়িক বিরোধ হিসেবে বর্ণনা করা যায় না। কেননা, সাধারণ হিন্দু ও মুসলমানরা কেউই এ বিষয়ে কখনোই জড়িত ছিল না, নেইও। সুতরাং নবকল্পিত হিন্দু ঐতিহ্যের বিষয়টি এক আকর্ষণীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিবেচনায় রূপ নিতে যাচ্ছে, যা অদূর ভবিষ্যতে ভারতের সা¤প্রদায়িক বিরোধ ও সংঘাতের গতিপথ নির্ধারণ করবে।
দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন থেকে নেওয়া। বাংলায় রূপান্তর করেছেন তানিম আসজাদ
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের অকল্পনীয় পতন ঘটে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিনও ভাবেনি তার সরকারের শুধু পতনই ঘটবে না, বরং তাকে চুপিসারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। আওয়ামীলীগের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের পর পরই আওয়ামীলীগের তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যায়। এর […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯