মারুফ মল্লিক
ছাত্রনেতারা কি বিএনপির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন? এটা কি দেশের রাজনীতির জন্য ভালো হবে? শিক্ষার্থীদের জন্যও কি ভালো হবে? যেকোনো বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাকেন্দ্রিক লড়াই হয় বিপ্লবীদের মধ্যে। এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। বিভিন্ন মত ও পথের মানুষ বিপ্লবে শামিল হওয়ায় এমনটা হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হয়েছে। বিপ্লবের পর বিভাজন রেখা স্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘটনা, এই বিভাজন এড়িয়ে যেতে পারাটাই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়। কিন্তু আমরা সম্ভবত সেই পরিস্থিতি এড়াতে পারছি না। স¤প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি সাক্ষাৎকার ঘিরে ছাত্র উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী নেতার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপির সঙ্গে তাঁদের মুখোমুখি অবস্থান স্পষ্ট হয়। ওই সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার সঙ্গে। এর মধ্যে তিনি বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন না হলে তাঁরা মানবেন না। তাঁর বক্তব্যের সারকথা কথা হিসেবে আমরা ধরে নিতে পারি যে সরকারে শিক্ষার্থীদের তিনজন উপদেষ্টা রয়েছেন। এই তিন উপদেষ্টা সরকারে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক দল গঠন ও নির্বাচন হলে জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক হবে। তাই তিনি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের বিষয়টি সামনে এনেছেন। এর মানে এই না যে নতুন করে সরকার গঠন করতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সম্ভবত এ পথে হাঁটতে চান না। বরং উপদেষ্টা নাহিদ নিরপেক্ষ সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেছেন বিএনপি আরেকটি ১/১১–এর মতো সরকার চান। এখানে ১/১১–এর মতো সরকারের কথা এল কীভাবে। আর বিএনপিই সব থেকে বেশি ১/১১ সরকারের জুলুমের শিকার হয়েছে। তাই বিএনপি ১/১১–এর মতো সরকার চাইছে এই বক্তব্য সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। গণহত্যাকারী পুলিশ, র্যাব, গুমকারী আয়নাঘরের সঙ্গে জড়িত সেনাসদস্যদের বিচার দেখতে চায়। এসব বিষয়ে সরকারের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। এগুলো কি তারা আগামী নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দিচ্ছে? যদি তা–ই হয়, তবে সংস্কারও আগামী নির্বাচিত সরকারের জন্য রাখতে অসুবিধা কোথায়? বিএনপির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংস্কার নিয়েও মতভিন্নতা রয়েছে। বিএনপি চায় প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচিত সরকারের হাতে বাদবাকি সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হোক। সরকার সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন করেছে। সংস্কারের জন্য এই কমিশনের গঠনের ধারণাও বিএনপির। অনেক আগেই তারা ৩১ দফায় এসব কথা বলেছিল। সংস্কার কমিশনগুলো যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার অধিকাংশই বিএনপি অনেক আগেই ঘোষণা করেছে যে তারা ক্ষমতায় গেলে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। বিএনপি এ–ও বলেছে, নির্বাচিতদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। ওই নির্বাচিত সরকার সবাইকে নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিএনপির এসব প্রস্তাব ছাত্রদের পছন্দ হয়নি। শিক্ষার্থীরা কি চান না ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংস্কার সম্পন্ন হোক? তাঁরা কি না বুঝেই বিএনপিকে প্রতিপক্ষ বানাতে শুরু করেছেন? এতে করে কি তাঁদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ফিকে হয়ে যাচ্ছে না? বিএনপি নির্বাচন বাদে কিছু বলেনি। তারা নির্বাচনের একটি পরিকল্পনা জানতে চেয়েছিল, এর বেশি কিছু নয়; বরং বরাবরই বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখা ও সহযোগিতার কথা বলেছে। বিএনপির বিরুদ্ধে ছাত্র ও জামায়াতপন্থীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপি বাধা দিয়েছে। কিন্তু সরকার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে তো দেখলাম না। গণহত্যার বিচার এই ছয় মাসে কত দূর এগোল? সারা দেশে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়ান, তাঁদের আটক করে না। ছয় মাস বিচারের জন্য খুব কম সময় নয়। এ বিষয়ও আমাদের মনে রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সর্বদলীয় উদ্যোগ নিলেই পারে সরকার। এই উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। ভারতেও আওয়ামী লীগ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছিল সেখানকার সরকারের উদ্যোগেই। আওয়ামী লীগ বারবার জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নিষিদ্ধের হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করে বরং তা নিয়ে রাজনীতি করেছে। ক্ষমতা হারানোর শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছিল, তাতে কোনো ফায়দা হয়নি। সেই নির্বাহী আদেশও টিকেনি। এখন কি তাহলে আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ না করে বরং তা নিয়ে রাজনীতি চলছে? ছাত্ররা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে না দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় বিএনপিকে দোষারোপ করছে বটে, কিন্তু এর জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি, যেহেতু সরকারের মধ্যে ছাত্রদের প্রতিনিধিও আছে। বরং বিএনপি চাইছে আগামী সংসদে বা এখনই সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। এছাড়া ছয় মাস পরে এসে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এমন সব বিষয় উত্থাপন করা হচ্ছে, যাতে অনেকের মনে হতে পারে নির্বাচন পেছানোর এক ধরনের প্রচেষ্টা চলছে। যেকোনো বিপ্লবের ঘোষণা হয় বিপ্লবের আগে বা সফল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। আগস্টের ৫ তারিখে বা এর পরে তাঁরা বিপ্লবের ঘোষণাপত্র তৈরি করে প্রকাশ্যে জনগণকে জানিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তখন তাঁরা এটা করেননি বা তখন তাঁদের পক্ষে তা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পাঁচ মাস পরে এসে বিপ্লবের ঘোষণাপত্র তৈরি নিয়ে যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে গোটা বিষয়টাই জট লেগে গেছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এখন তাঁরা গণপরিষদ গঠনের কথা উত্থাপন করেছেন। একটি সরকার গঠিত হয়ে তারা নানা কাজে তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। তাঁরা ৫ আগস্টের পর পরই গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাব দিতে পারতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘হৈমন্তী’র একটি বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মতো এমন বিড়ম্বনা আর নাই। শিক্ষার্থীদের অবস্থা হচ্ছে এই উক্তির মতো। সময়ের কাজ অসময়ে করতে নাই। তাতে বিড়ম্বনা বাড়ে বৈ কমে না। ফলে নানা ইস্যু হাজির করে নির্বাচনকে পিছিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা যাবে না। দেশের মানুষ দ্রæত জনগণের ভোটে একটি নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। আওয়ামী লীগের বিচার দেখতে চায়। প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান দেখতে চায়। গণহত্যাকারী পুলিশ, র্যাব, গুমকারী আয়নাঘরের সঙ্গে জড়িত সেনাসদস্যদের বিচার দেখতে চায়। এসব বিষয়ে সরকারের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। এগুলো কি তারা আগামী নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দিচ্ছে? যদি তা–ই হয়, তবে সংস্কারও আগামী নির্বাচিত সরকারের জন্য রাখতে অসুবিধা কোথায়? শিক্ষার্থীদের উচিত ছিল জটিল রাজনীতি ঘেরাটোপে নিজেদের ক্রমশ জড়িয়ে না ফেলে দ্রæত একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা। প্রয়োজনে তাঁরা সরকার থেকে বেরিয়ে এসে রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারতেন। তাঁরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা এটা করেননি। না করে বরং পিছিয়ে যাচ্ছেন।
ড. মারুফ মল্লিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের অকল্পনীয় পতন ঘটে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিনও ভাবেনি তার সরকারের শুধু পতনই ঘটবে না, বরং তাকে চুপিসারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। আওয়ামীলীগের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের পর পরই আওয়ামীলীগের তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যায়। এর […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯