আজ বৃহস্পতিবার | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৬ মাঘ ১৪৩১ | ২৯ রজব ১৪৪৬ | সকাল ১১:৩৭

রূপগঞ্জে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ নেপথ্যে ‘বালু হাবিব’

ডান্ডিবার্তা | ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য হাবিবুর রহমান, যিনি এলাকায় ‘বালু হাবিব’ নামে পরিচিত। স্থানীয়ভাবে আধিপত্য ধরে রাখতে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রন করতেন এ আওয়ামী লীগ নেতা। গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর হাবিব আত্মগোপনে চলে গেলেও তার অনুসারীরা স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন। স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতাও এতে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাবিবুর রহমানের দখলে থাকা একটি আড়তকে কেন্দ্র করে উপজেলার গোলাকান্দাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর আগেও এই আড়তের দখল নিয়ে হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা বলছেন, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত ছিলেন হাবিবুর রহমান। গাজীর প্রভাব ও সমর্থনের কারণে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাস্তবতায় হাবিবুর রহমান এলাকা ছাড়লেও এলাকায় তার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। গোলাকান্দাইলের আড়ৎ থেকে এখনও কয়েক লাখ টাকার লেনদেনের নিয়ন্ত্রণ করেন তার ভাতিজা আইয়ুব খান ও ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান। যদিও এই আড়তের জমির মালিক অনলাইন ক্যাসিনোকাÐে আলোচিত সেলিম প্রধান ওরফে ‘ডন’ সেলিম। সেলিম প্রধানের অভিযোগ, বিগত সরকারের সময় জেলে থাকা অবস্থায় রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ার‌্যমান আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান ওরফে বালু হাবিব, আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর ভূঁইয়া ও স্থানীয় সাংবাদিক নেতা মীর আব্দুল আলীম জাল স্বাক্ষর ব্যবহার তাঁর (সেলিম) মালিকানাধীন ১৬ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে সেখানে আড়ৎ গড়ে তোলে। জেল থেকে বের হওয়ার পর তিনি তাঁর জমি ফেরত চান। তবে দখলদাররা রূপগঞ্জের তৎকালীন সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর ক্ষমতা ব্যবহার করে জোর করে আড়ৎ দখলে রাখেন। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে গত বছরের ২৪ মে গোলাম দস্তগীরের লোকজন তার বাড়িঘর ভাঙচুর ও তার বাড়ি লক্ষ করে গুলি চালায়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাবিবুর রহমান পালিয়ে যান। তবে হাবিবুরের পক্ষে তার ভাতিজা আইয়ুব খান ও মজিবুর রহমান স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আড়ৎ দখলে রাখেন। এ নিয়ে সোমবার তিনি স্থানীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি মানববন্ধন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকালে আইয়ুব ও মজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লোকজন নিয়ে মিছিল করে এসে তার বাড়িঘরে হামলা চালায়।এসময় বাড়ির নীচে থাকা তার একটি গাড়ি, একটি টিনসেড ঘর ও ১০ টি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এ সময় হামলাকারীরা বাড়িতে ককটেল ও হামবোমা নিক্ষেপ করেছে বলেও সেলিম প্রধানের অভিযোগ। আড়তের মালিকানা বুঝে পেতে সেলিম প্রধান আদালতে মামলাও করেছেন। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার ও স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে তিনি বিষয়টি মিমাংসার জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরই মধ্যে তার বাড়ি ঘরে গুলি ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটলো। এ বিষয়ে তিনি থানায় মামলা করবেন। এদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাবিবুর রহমান ওরফে বালু হাবিব এলাকায় সন্ত্রাসী হাবিব বলেও পরিচিত। দখল, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতার জন্য সে তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে ব্যবহার করতো। রূপগঞ্জ উপজেলায় প্রভাবশালী সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সাথে সখ্যতা তৈরি করে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা বনে যান। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি চেয়ারম্যান হন একই প্রভাবে। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলেও সবসময় ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও সেলিম প্রধানের আড়তটি আত্মীয় ও অনুসারীদের মাধ্যমে এখনও দখলে রেখেছেন হাবিবুর রহমান। প্রতিমাসে ৩০ লাখ টাকা তোলা হয় এই আড়ত থেকে। বিশাল পরিমাণ এই টাকার অংশ ছাড়তে নারাজ হাবিব সখ্যতা গড়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতার সাথেও। বিএনপি নেতাদের সাথে ভাগাভাগি করেই এখন ওই আড়তের নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন তিনি। গত সোমবার নিজের জমির উপর নির্মিত আড়ৎ ফিরে পেতে মানববন্ধন করেন সেলিম প্রধান। এতে ক্ষুব্দ হয়ে হাবিবুর রহমানের ইন্ধনে সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হয় বলে অভিযোগ সেলিমের। যা পরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। যদিও এই সংঘর্ষের সাথে আড়তের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি আড়তের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা আইয়ুব খানের। তিনি বলেন, ‘সেলিম প্রধানের বাড়ি থেকে একদল সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি মিছিলে গুলি চালায়। এ নিয়ে সেখানে সংঘর্ষ বাধে।’ গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে টানা তিনঘন্টা থেমে থেমে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। এই সময় অনলাইন ক্যাসিনোকাÐে আলোচিত সেলিম প্রধানের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও সেলিম প্রধানের ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীরা এ সংঘর্ষে জড়ান। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির উপজেলা কমিটির আহŸায়ক রফিকুল ইসলাম এবং ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাসুদুর রহমান। উভয়পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুড়েছেন। সংঘর্ষে হাবিবুর রহমানের অনুসারীরাও অংশ নেন বলে স্থানীয় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন। জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘একটি আড়ত নিয়ে সেলিম প্রধান ও মজিবুর ভূঁইয়ার মধ্যে বিরোধ। এ নিয়েই সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে আমরা জানতে পেরেছি। সংঘর্ষে গুলি ও হাতবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।’ ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০ রাউন্ড গুলির খোসা ও একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও কাজ শুরু করেছি।’




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা