
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রভাব বেড়েছে কয়েকজন বিএনপি নেতার। তাদের মধ্যে মহানগর বিএনপির আহŸায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু অন্যতম। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই দুই বিএনপি নেতা ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন কর্মকাÐের কারণে বিতর্কে জড়িয়েছেন। সর্বশেষ আদালতপাড়ায় তাদের দু’জনের নেতৃত্বে ভাঙচুর ও বায়তুল আমান গুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তাদের নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। বিষয়টি বিএনপির হাইকমান্ডেও আলোচিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক সূত্র। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহŸায়ক ও আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সাখাওয়াত হোসেন খান প্রথম আলোচনায় আসেন সাত খুন হত্যাকাÐের সময়। তিনি বাদীপক্ষের আইনজীবী হওয়ার সুবাদে সারাদেশে আলাদা পরিচিতি পান। এ পরিচিতির সূত্রেই তিনি ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হন। যদিও ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে পরাজিত হন। সাখাওয়াত বিএনপির মহানগর শাখার আগের কমিটিতে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির পদেও ছিলেন। অন্যদিকে আবু আল ইউসুফ খান টিপু ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে বিএনপির নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে পৌঁছেছেন। তিনি মহানগর বিএনপির আগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। ওই সময় মহানগর বিএনপিতে কালাম ও সাখাওয়াতের নেতৃত্বে দু’টি বলয় তৈরি হয়। ২০২২ সালে যখন পুরোনো কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন আহŸায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় তখন সদস্য সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে চলে আসেন টিপু। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে জেল খেটেছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এ অঞ্চলের ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিলেন শামীম ওসমান। আওয়ামী লীগের সাবেক এই সংসদ সদস্য ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাÐ ও আধিপত্যের কারণে ভুক্তভোগী হয়েছিলেন সাখাওয়াত ও টিপু। কিন্তু ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই ফ্রন্টলাইনে চলে আসা বিএনপির এ দুই নেতা নানা বিতর্কে জড়াতে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজনকে আশ্রয় দেওয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার আসামিদের জামিনে সহযোগিতা, মামলা বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ৪ ডিসেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী, ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যসচিব তাজুল ইসলাম শামীমকে গ্রেপ্তার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। এর প্রতিবাদে পরদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক ঘন্টা বঙ্গবন্ধু সড়ক অবরোধ করে রাখেন এ পরিবহন শ্রমিক নেতার অনুসারীরা। এই সময় তারা বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপুর বিরুদ্ধে মিছিলও করেন। ওই সময় পরিবহন শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদের নেতাকে গ্রেপ্তারের পেছনে ইন্ধন ছিল আবু আল ইউসুফ খান টিপুর। তিনি পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠনটি দখলে নিয়ে নিজের অনুসারীদের বসাতে চেয়েছিলেন। এতে বাধা পেলে তাজুলকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করান। মহানগর বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সাখাওয়াত ও টিপুর বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর মামলা বাণিজ্যের অভিযোগও ওঠে। ভুক্তভোগীদের প্রভাবিত করে তারা মামলায় বিভিন্নজনের নাম সংযুক্ত করেছেন। এমনকি কয়েকজন বিএনপি কর্মীর নামও তারা একাধিক মামলায় দিয়েছেন, যারা তাদের বলয়ের বাইরে গিয়ে রাজনীতি করেন। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলার আসামিদের জামিনেও তারা সহযোগিতা করছেন বলে রয়েছে অভিযোগ। চাঁদাবাজির অভিযোগও ওঠে আবু আল ইউসুফ খান টিপুর বিরুদ্ধে। গত ৬ সেপ্টেম্বর বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকায় নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হন এ বিএনপি নেতা। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালামের ছেলে আবুল কাউসার আশা ও ভাই আতাউর রহমান মুকুলকেও আসামি করা হয়। বিএনপির এ বলয়ের নেতাদের অভিযোগ, দলের ত্যাগী অনেক নেতা-কর্মী বঞ্চিত করে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি ঘোষণা করেছেন সাখাওয়াত ও টিপু। পদবাণিজ্য ও চাঁদাবাজির কারণে তাদের উপর ক্ষুব্দ ছিল দলের কর্মীরা। টিপুর উপর হামলা তারই বহিঃপ্রকাশ। সর্বশেষ আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন বিএনপি নেতা সাখাওয়াত ও টিপু। রাজধানীতে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার পর বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে ‘মব কালচারের’ বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। গত ৬ ফেব্রæয়ারি তারা সারাদেশের ভাঙচুরের ঘটনাগুলোর কথা উল্লেখ করে এতে উদ্বেগও প্রকাশ করেন এবং সকলকে এই ধরনের কর্মকাÐ থেকে বিরত থাকার আহŸান জানান। যেদিন বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে এই বিবৃতি দেন ওইদিনই নারায়ণগঞ্জে আদালতপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের কয়েকটি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলায় থাকা বঙ্গবন্ধু কর্নারেও ভাঙচুর করা হয়। এই পুরো কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন মহানগর বিএনপির আহŸায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানান, ওইদিন বেলা সাড়ে এগারোটর দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। পরে তারা নির্মাণ শ্রমিকদের খবর দেন। বেলা বারোটার দিকে বড় আকারের হাতুড়ি, শাবল নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকরা পৌঁছালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভাঙা শুরু করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হেসেন খান ও আবু আল ইউসুফ টিপু নিজেও শাবল ও হাতুড়ি দিয়ে ম্যুরাল ভাঙা কার্যক্রমে অংশ নেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আবক্ষ ভাস্কর্যটিও ভাঙা হয়। পরে পাশে জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনের দু’টি ম্যুরালও একইভাবে ভাঙা হয়। যদিও এ ম্যুরালগুলো গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। এক দফায় ভাঙচুরও চলে তখন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবির, আইনজীবী সমিতি ও সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া, মহানগর বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদসহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা। জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জাকিরকেও সেখানে দেখা যায়। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলার ‘বঙ্গবন্ধু কর্নারেও’ ভাঙচুর চলে। সেখানে থাকা ছবি ও ফটোফ্রেম ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুরের এক পর্যায়ে ভাঙা কাঁচে আঘাতও পান আবু আল ইউসুফ টিপু। ভাঙচুর চলাকালীন পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসেনি। সাংবাদিকদের সামনে সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘(শেখ মুজিবের) এইসব ছবি দিয়ে আওয়ামী লীগ পবিত্র বিচারাঙ্গণকে কলুষিত করেছে। এই ম্যুরালের দোহাই দিয়ে প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছিল। বাংলাদেশে বিপ্লব সাধিত হয়েছে এবং এখন দেশে নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং এখন প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন প্রশাসন ও বিচারবিভাগকে কলঙ্কিত কাউকে করতে না পারে সেজন্য নারায়ণগঞ্জের সাধারণ আইনজীবীরা এইসব ছবি অপসারণ করেছে। আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত নারায়ণগঞ্জ চাই।’ আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘গতকাল দেখেছেন শেখ মুজিবের ৩২ নম্বরের বাড়ি ভেঙেছে জনগণ। আমরা তারই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল বা ছবি ভেঙে দিচ্ছি। এটি নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। যেখানে যেখানে আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবের কোনো ছবি বা স্মৃতিচিহ্ন আছে সবগুলো ভেঙে ফেলা হবে।’ আদালতপাড়ায় ভাঙচুরের সময় শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদাবাড়ি বায়তুল আমান ভাঙার কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির এ নেতা। পরে সন্ধ্যায় বায়তুল আমান এক্সাভেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় মাগরিবের আযানের কিছুক্ষণ পর শহরের মিশনপাড়া এলাকা থেকে সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি বায়তুল আমানের সামনে গিয়ে থামে। এই সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাদের হাতে থাকা বড় আকারের হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পরই একটি এক্সাভেটর আনা হয় এবং ভবনটি পরে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই সময় বিএনপি নেতা-কর্মী ও উৎসুক জনতাকে উল্লাস করতে দেখা যায়। বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির এই দুই নেতার কর্মকাÐের বিষয়ে অবগত হয়েছে কেন্দ্র। নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়া সাখাওয়াত ও টিপুর বিষয়ে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কমিটি ভেঙে দেওয়ার গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের অকল্পনীয় পতন ঘটে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিনও ভাবেনি তার সরকারের শুধু পতনই ঘটবে না, বরং তাকে চুপিসারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। আওয়ামীলীগের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের পর পরই আওয়ামীলীগের তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যায়। এর […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯